শওকত ওসমানের, বাংলাদেশের একজন চিন্তক, লেখক ও কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের আজ জন্মদিন। জানব তার সম্পর্কে-
✨নাম-
শেখ আজিজুর রহমান, যিনি শওকত ওসমান কলমি নামে অধিক পরিচিত।
✨পদচারণার ব্যাপ্তি-
তিনি একাধারে নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, রাজনৈতিক লেখা, শিশু-কিশোর সাহিত্য রচনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তিনি ছিলেন এক উচ্চকিত কণ্ঠের অধিকারী।
✨জন্ম-
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ জানুয়ারি পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ মোহাম্মদ এহিয়া, মাতা গুলজান বেগম।
✨শিক্ষালাভ-
পড়াশোনা করেছেন মক্তব, মাদ্রাসা, কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা শুরু করলেও পরবর্তীকালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও অর্থনীতি বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। কিন্তু একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
✨কর্মজীবন-
আইএ পাস করার পর তিনি কিছুদিন কলকাতা করপোরেশন এবং বাংলা সরকারের তথ্য বিভাগে চাকরি করেন। এমএ পাস করার পর ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে লেকচারার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ অব কমার্সে (বর্তমানে সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম) যোগ দেন এবং ১৯৫৮ সাল থেকে ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে স্বেচ্ছা অবসরে যান। চাকরি জীবনের প্রথমদিকে কিছুকাল তিনি ‘কৃষক’ পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেন। প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ শওকত ওসমানকে বলতেন ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের পর তিনি চলে আসেন পূর্ববঙ্গে।
✨রচনাসমগ্র-
উপন্যাস –
জননী (১৯৫৮) (১ম উপন্যাস)
ক্রীতদাসের হাসি (১৯৬২)
সমাগম (১৯৬৭)
চৌরসন্ধি (১৯৬৮)
রাজা উপাখ্যান (১৯৭১)
জাহান্নম হইতে বিদায় (১৯৭১)
দুই সৈনিক (১৯৭৩)
নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৩)
পতঙ্গ পিঞ্জর (১৯৮৩)
আর্তনাদ (১৯৮৫)
রাজপুরুষ (১৯৯২)
জলাঙ্গী (১৯৭৬)
বনী আদম
রাজসাক্ষী
বেড়ী
গল্পগ্রন্থ –
জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প (১৯৫২)
মনিব ও তাহার কুকুর (১৯৮৬)
ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৯০)
প্রস্তর ফলক
সাবেক কাহিনী
জন্ম যদি তব বঙ্গে
পুরাতন খঞ্জর
বিগত কালের গল্প
নেত্রপথ
উভশৃঙ্গ
পিজরাপোল
উপলক্ষ
প্রবন্ধগ্রন্থ-
ভাব ভাষা ভাবনা (১৯৭৪)
সংস্কৃতির চড়াই উৎরাই (১৯৮৫)
মুসলিম মানসের রূপান্তর (১৯৮8)
নাটক –
আমলার মামলা (১৯৪৯)
পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা (১৯৯০)
তস্কর ও লস্কর
কাঁকর মনি
শিশুতোষ গ্রন্থ-
ওটেন সাহেবের বাংলো (১৯৪৪)
মস্কুইটো ফোন (১৯৫৭)
ক্ষুদে সোশালিস্ট (১৯৭৩)
পঞ্চসঙ্গী (১৯৮৭)
রম্যরচনা –
নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত (১৯৮২)
স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ-
স্বজন সংগ্রাম (১৯৮৬)
কালরাত্রি খ-চিত্র (১৯৮৬)
অনেক কথন (১৯৯১)
গুড বাই জাস্টিস মাসুদ (১৯৯৩)
মুজিবনগর (১৯৯৩)
অস্তিত্বের সঙ্গে সংলাপ (১৯৯৪)
সোদরের খোঁজে স্বদেশের সন্ধানে (১৯৯৫)
মৌলবাদের আগুন নিয়ে খেলা (১৯৯৬)
আর এক ধারাভাষ্য (১৯৯৬)
অনূদিত গ্রন্থ –
নিশো (১৯৪৮-৪৯)
লুকনিতশি (১৯৪৮)
বাগদাদের কবি (১৯৫৩) (নাটক)
টাইম মেশিন (১৯৫৯)
পাঁচটি কাহিনী (লিও টলস্টয়, ১৯৫৯)
স্পেনের ছোটগল্প (১৯৬৫)
পাঁচটি নাটক (মলিয়ার, ১৯৭২)
ডাক্তার আবদুল্লাহর কারখানা (১৯৭৩)
পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে মানুষ (১৯৮৫)
সন্তানের স্বীকারোক্তি (১৯৮৫)
✨পুরস্কার-
বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২)
আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬)
প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৭)
একুশে পদক (১৯৮৩)
মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১)
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭)
আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭)।
✨পরলোকগমন-
১৪মে, ১৯৯৮ তারিখে তিনি পরলোকগমন করেন।
সংকলনে- মাসুদ মুস্তাফিজ