অনেকদিন ধরে সেকেন্ড ওয়েভ শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়ে এই লেখাটি লিখছি।
প্রথম ওয়েভ কি?
প্রথম ওয়েভ হলো যেদেশে যেদিন প্রথম কোভিড ১৯ রোগী সনাক্ত হয়েছে সেদিন থেকে যেদিন সেই একই দেশে রোগী থেকে রোগীতে সংক্রমনের হার বা আর নট ১ বা তার কাছাকাছি পৌঁছায় অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অনুযায়ী সংক্রমনের হার পরীক্ষার অনুপাতে শতকরা ৫% এর নীচে আসে।
যেসব দেশ প্রথম ওয়েভ শেষ করেছে তাদের কারো কারো ৫০ দিন, কারে আরো বেশী দিনও জিরো কেস ছিলো।
বাংলাদেশে আর নট বা একজন রোগী থেকে গড়ে কতজনে এটা ছড়ায় সেটা আমরা এখনো জানি না।
আমরা এমন কোন দিন কাটাই নাই যেদিন কোন রোগী ধরা পড়ে নাই।
আমাদের টেস্ট অনুপাতে সংক্রমনের হার তেমন একটা কমেও নাই।
তাই আমাদের দেশে কোন সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয় নাই।
সেকেন্ড ওয়েভ কাদের দেশে শুরু হয়?
যারা প্রথম ওয়েভকে কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। কারন তারা লকডাউন , চিকিৎসা, আইসোলেশন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা , এসব করেই রোগটিকে প্রথম ধাক্কায় নিয়ন্ত্রন করেছিলো।
তাই সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ন্ত্রন করাতেও এরা বেশী সফল হবে, এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের দেশে কোন সেকেন্ডওয়েভ শুরু হয় নাই।
আমাদের ঢেউ প্রথমটাই চলছে। আর আমরা কি কি করেছি নিশ্চয় এত সহজে ভুলেন নাই।
নকল মাস্ক পিপিইর ব্যবস্থা করেছি।
ডাক্তারদের ধমকাধমকি করেছি।
লকডাউন মানি নাই।
লকডাউনের মধ্যে “সীমিত” সবকিছুুই করেছি। গণ পরিবহন খোলা রেখেছি। হাঁটিয়ে গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকা আনা নেওয়া করেছি। বলেছি গরীবদের শক্তি আছে। শপিং মল খুলে ঈদে সীমিত শপিং করেছি। ঈদে বাড়ী যাতায়াত করেছি। ঢাকা নারায়নগঞ্জ ইনফেকশনের এপিসেন্টার হওয়ার পরেও এখানে কোন জোরালো ব্যবস্থা নেই নাই। রাজাবাজার ওয়ারীতে হাস্যকর লাল নীল হলুদ সবুজ কান্ডকারখানা করেছি। জেকেজি সাহেদ জাতীয় চোরদের সুযোগ দিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পতে গাড়ীর পার্টস বিক্রেতার কাছ থেকে সরঞ্জাম কিনেছি। কাঁচাবাজারের ফ্লোরে আইসোলেশন ইউনিট বানিয়েছি। গবেষণার ফলাফল ঘোষণা করে পরের দিন সেটা প্রত্যাহার করেছি। পরীক্ষার কিট বানানো নিয়ে ও টিকা বানানো নিয়ে মহা হুলুস্থুল করেছি।
আমরা মাস্ক পরি না। স্বাস্থ্যবিধি মানি না। আমরা কারো কোন কথা শুনি না।
তাই আমাদের কোন সেকেন্ড ওয়েভ নাই।
আমেরিকাতে ডা. ফাউচিও বলেছেন সেখানেও কোন সেকেন্ড ওয়েভ নাই। হয়তো একটা দুটো স্টেটে আলাদা ভাবে এটা বলা যেতে পারে। কিন্তু দেশ বিবেচনায় আমেরিকা প্রথম প্রবাহেই আছে।
আমাদের দেশে বয়স্ক জনসংখ্যা কম হওয়াতে মৃত্যুর পরিমান কম মনে হচ্ছে। আর চিকিৎসাও ভালো হচ্ছে। কিন্তু এটা দিয়ে প্রথম ওয়েভ শেষ হয়ে ২য় ওয়েভ শুরু হয়েছে এসব বলা যাবে না।
ওয়েভ ১ম, ২য়, না ৩য় , তার সাথে আপনার শরীরে করোনা ঢোকার কোন সম্পর্ক নাই। আপনার শরীরে ঢুকলো মানে এটা ১ম বার ঢুকলো। আর এটা আপনাকে মেরে ফেলবে কিনা এটা ডাক্তাররাও শুরুতে বলতে পারে না। তারা ঔষধ দিয়ে ভরসা করেন আপনার শরীরের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ঔষধের ক্রিয়া ও আপনার শরীরে প্রতিক্রিয়ার উপরে। সবার শরীরে একই ঔষধ সমান কাজ করে না।
ভালো করে পড়েন।
ওয়েভ প্রথম না দ্বিতীয় তার সাথে আপনার আক্রান্ত হওয়া নির্ভর করে না। আপনার শরীরে ভাইরাস ঢুকলো মানে প্রথমবার ঢুকলো আর আপনার মৃত্যু হলে সেটা একবারই হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানেন।
হাত পরিষ্কার, মাস্ক পরিধান, নিরাপদ ব্যবধান।
আমার মামার বাড়ীতে অবান্তর কথাকে বলে ”ছাতার মাথা” বলা।
আমিও বলি, সেকেন্ড ওয়েভ এর নামে এসব ”ছাতার মাথা“ না বলে স্বাস্থ্যবিধি মানেন।
Courtesy: Abdun Noor Tushar